মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক, ডেমরা (ঢাকা)
বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা ডেমরা-যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা-রামপুরা সড়কে মানুষের ভোগান্তি যেন চরম আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি হলেই এ সড়কগুলোর ছোট-বড় ও মাঝারি গর্তে জমে থাকে পানি। আর যানবাহনগুলো ওই সব গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ কারণে খানাখন্দ ও কর্দমাক্ত ওই সড়কে মানুষ ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
এদিকে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কটির ধীরগতির উন্নয়ন কাজ ও বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি যেন ক্রমেই বাড়ছে। আর ভোগান্তি বাড়ার জন্য ঢাকা সড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল।
তবে ঢাকা সড়ক বিভাগের দাবি- সড়কটির প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হলেও কিছু সার্ভিস লাইন ও প্রধান সড়কের কাজ এখনো বাকি। তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন- ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এছাড়া ওই দুটি সড়কে রাতের নিত্য যানজটেও নাকাল হয়ে পড়েছেন পথচারীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গত ১৭-১৮ মাস ধরে চলমান থাকা ধীরগতির উন্নয়ন কাজে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব গর্তগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলেই মানি জমে থাকে এবং কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার বাস্টস্ট্যান্ড চত্বরের আশপাশসহ ডেমরা-রামপুরা সড়কের রাসেল পাম্প ও মীরপাড়া পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। তাছাড়া ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের বাঁশেরপুল, কোনাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, মাতুয়াইল ও মৃধাবাড়ী এলাকার সার্ভিস লাইন ও প্রধান সড়কে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সড়কের মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় বড় বিদ্যুতের খুঁটিতো রয়েই গেছে।
গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকালের
বৃষ্টির হলে সড়ক দুটির গর্ত ও খানাখন্দে পানি জমে যানবাহন চলাচলে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। বিশেষ করে ডেমরার চৌরাস্তা এলাকায় রাস্তা যেন পুকুরসদৃশ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ছোট বড় গর্তের কারণে যানবাহন চলে হেলেদুলে। এতে যানজটসহ নানা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে যাত্রী ও যানবাহন চালকেরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী সড়কের স্টাফ কোয়ার্টার, বামৈল, বাশেরপুল, কোনাপাড়া, মৃধাবাড়ী ও ভাঙ্গাপ্রেস পর্যন্ত এলাকায় সড়কে চোখে পড়ে নানা অব্যস্থাপনা। কোথাও সড়কে বড় বড় গর্ত, কোথাও বিকল্প সড়কের মাটিতে পানি জমে কর্দমাক্ত, কোথাও বিদ্যুতের খুঁটিসহ নানা অনিয়ম অব্যস্থাপনা। আর শুস্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলাবালির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস শুরু হয়। এছাড়া সড়কের দুপাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট ও বাজার বসানো হয়েছে। এতে সড়কে প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা লেগেই থাকে। আর স্টাফ কোয়ার্টারে সিটি টোলের নামে ওপেন চাঁদা আদায়ের বিষয়টি যানজটের অন্যতম কারণ; যা মানুষের ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টাফ কোয়ার্টার হাজী হোসেন প্লাজা মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন বলেন, সড়কের মধ্যেই ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার মাটি। ফলে শুধু ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়ক নয়, ধুলাবালিতে একাকার দুপাশের শপিং মল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ চারপাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাট। পথচারীরা নাক-মুখ বন্ধ করেই এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। আর বৃষ্টি হয়েছে সড়কে পানি জমে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
ডেমরা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. জিয়া উদ্দিন খান দিনকালকে বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে বলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। ইতোপূর্বে সড়কের গর্তে পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে, যা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর প্রবেশদ্বার ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার ও ডেমরা-রামপুরা সড়কের রাসেল পাম্প পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পয়েন্টের বেহাল দশা মেরামত বা সড়ক শতভাগ প্রস্তুত করা জরুরি, যা বারবার বলার পরও সড়ক বিভাগ করছেই না।
ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. সেলিম দিনকালকে বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজ চলাকালীন নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। ধুলার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত সড়কে পানি দিচ্ছি। আর সমস্যাজনিত এলাকায় আমরা প্রতিনিয়ত রিপেয়ারিং কাজ করি জনদুর্ভোগ এড়াতে। যখন যেখানেই সমস্যা দেখা দেয়, তখনই কাজ শুরু করে দেই আমরা। ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে খবর পেলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেই। আর বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমেছে যা অপসারণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৩৩২ কোটি টাকা বরাদ্দের ১৮ মাস মেয়াদি ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের ৬ লেন উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে গত সাড়ে ১৭-১৮ মাস আগে। কিন্তু ধীরগতির উন্নয়ন কাজে এ সড়কে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক দিনকালকে বলেন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত ও নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের শত শত খুঁটি অপসারণ ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঠিক রেখে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে কিছুটা দুর্ভোগ বাড়লেও তা ঠিক হয়ে যাবে। আর নির্দিষ্ট সময়েই সব কাজ শেষ হবে।